অন্যান্য

গোবিন্দগঞ্জের ইতিহাসের সাক্ষী ধ্বংসের পথে

গোবিন্দগঞ্জের ইতিহাসের সাক্ষী ধ্বংসের পথে…

মোঃ নাফিউল ইসলাম ঃ গাইবান্ধার জেলার গোবিন্দগঞ্জের কুঠিবাড়ীতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ভগ্নপ্রায় অবস্থায় দাড়িয়ে থাকা লোহার শিকলে বাঁধা “ডিসপেনচারী”টিতে হরিলুট চলছে। জানালা, দরজা, টিনের চালার পর এবার লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ডিসপেনচারির ৪টি লোহার শিকল কে বা কারা চুরি করে নিয়ে গেছে। শুধু মাত্র প্রশাসনিক তদারকি আর সুদৃষ্টির অভাবে ঐতিহাসিক এ ডিসপেনচারীটি ধ্বংশ হতে চললেও দেখার কেউ নেই।
জানা যায়, নীলকরদের রাজত্ব শেষে গোবিন্দগঞ্জের এই ‘কুঠিবাড়ী’ মহারাজা স্যার প্রদোৎ কুমার ঠাকুরের অধীনস্থ হয় এবং মহারাজা প্রদোৎ কুমার ঠাকুর বাহাদুর এই কুঠিবাড়ীতেই তার জমিদারী প্রশাসনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিনত করেন। এই কুঠিবাড়ীতে মহারাজা তার রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি বেশকিছু উন্নয়নমুলক ও সেবামুলক কর্মকান্ড শুরু করেন। অনেকের ধারনা এসময়ই মহারাজা তার কর্মচারী ও প্রজাদের চিকিৎসা সেবার জন্যই লোহার শিকলে বাঁধা এই ডিসপেনচারীটি প্রতিষ্ঠা করেন।
উপজেলা ভূমি অফিস ও অফিসার্স কোয়ার্টারের পিছনে ভগ্নপ্রায় অবস্থায় এখনও দাড়িয়ে আছে জনসাধারণের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের অন্যন্য স্থাপনা লোহার শিকলে বাঁধা “ডিসপেনচারী”। ছোট-খাট অসুখে বিনা মূল্যে ওষুধ পাওয়া যায় এ কারণে ব্যাপক পরিচিতি ছিল এই ‘ডিসপেনচারী’র। ইট সিমেন্টের ঢালাই করা মেঝে, চারিদিকে অর্ধেক ইট ও আরেক অর্ধেক টিনের দেয়াল আর উপরে বাংলা টিনসেড এ ঘরটিতে ৩টি কক্ষ ছিল। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এ ঘরটি উত্তর দক্ষিনে ২টি ও পূর্ব পশ্চিমে ২টি মোট ৪টি বড় বড় মোটা শিকল দিয়ে মাটির সাথে বাঁধা ছিল। ঝড়ে যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এজন্যই সম্ভবত ৪টি লোহার শিকল দিয়ে মাটির সাথে বাঁধা হয় এ ডিসপেনচারী’র ঘরটি
এরপর সরকারি ভাবে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা হলে এই ডিসপেনচারীর কদর কমে যায় এবং এক সময় এই ডিসপেনচারীর কার্যক্রম বন্ধ করে তালা বদ্ধ করা হয়। দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ থাকা অবস্থায় একসময় গঙ্গাজলি নামের এক সুইপার তার স্বামী সন্তানদের নিয়ে এই ডিসপেনচারীর বারান্দায় বসবাস শুরু করে এবং এখনও তার পরবর্তী পরিবার এই ডিসপেনচারীর সামনে আরেকটি টিনের ঘর তুলে বসবাস করে আসছে। কিন্তু কিছু নেশাখোর ব্যক্তি ডিসপেনচারির দরজা, জানালা, টিনসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র চুরি করে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে তাদের নেশার অর্থ জুগিয়েছে। এরই মধ্যে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৪টি লোহার শিকলও কে বা কারা চুরি করে নিয়ে গেছে।
শুধুমাত্র প্রশাসনিক তদারকি ও সুদৃষ্টির অভাবে তাদের চোখের সামনেই দিন দিন কে বা কারা এই ডিসপেনচারী’র আসবাবপত্রসহ দরজা-জানালা, টিন খুলে নিয়ে গেছে। বর্তমানে ঐতিহাসিক নিদর্শন এই ডিসপেনচারীটি এখন ধ্বংশ হতে চললেও দেখার কেই নেই।
ডিসপেনচারীর আঙ্গিনায় পরিবার নিয়ে বসবাসরত সুইপার গণেশ বাসফোর ও জনি বাসফোর জানান, কে বা কারা দরজা জানালা, টিন, লোহার শিকল খুলে নিয়ে গেছে আমরা জানিনা।
জনৈক এক ব্যক্তি জানান, কিছুদিন আগেও এ ঐতিহাসিক ডিসপেনচারীর দরজা, জানালা, টিনের চালা, লোহার শিকল সবই ছিল। কিন্তু এখন দেখছি অনেক কিছুই নেই। উপজেলার প্রশাসনিক চত্বরে অবস্থিত প্রশাসনের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সামনে থেকেই জমিদারী আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শনটি দিন দিন হরিলুট হয়ে যাওয়া দুঃখজনক।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম আব্দুল্লা-বিন শফিকের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আমাদের সময়কে বলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই- তবে আমি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
১২/১/২০২৩ ইং

সম্পরকিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও আরও দেখুন
Close
Back to top button